উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭/০৮/২০২৩ ৬:৫২ পিএম

শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। অশিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রই সমাজের জন্য বোঝা। শিক্ষা ছাড়া একটি জাতির উন্নতি কল্পনাও করা যায় না। একটি জাতিকে উন্নতির ক্রমবর্ধমান পথে ধাবিত হতে গেলে চূড়ায় পৌঁছাতে হলে শিক্ষা ছাড়া গত্যন্তর নেই। জাতীয় উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা। একটি ভালো বীজ থেকেই সম্ভব একটি গাছ মহীরুহ হয়ে উঠা, তেমনি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা জাতির ভবিষ্যৎ গঠন ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। ভালো বীজ থেকেই কেবল ভালো ফল আশা করা যায়। প্রাথমিক শিক্ষাই হলো শিক্ষাব্যবস্থার বীজ।

বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন একজন মানুষের মূল ভিত্তি হলো তার প্রাথমিক শিক্ষা। প্রতিটি শিশু তার জন্মলাভের পর থেকে বিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত পরিবারের কাছে বিশেষত মা-বাবার স্নেহ-ছায়ায় তার জীবনের মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করতে শেখে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ শিশুদের সে সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করে, যা তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মূলত এটি নির্ভর করে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান, বিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি প্রভৃতির ওপর।

সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পদাপর্ণ করেছে। বাস্তবায়িত হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রণিত ‘রূপকল্প-২০২১’। এর পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তার সফল বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষাকে উন্নত দেশের মতো মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নীত করতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৪ নম্বর অভীষ্ট হলো ‘সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি।

’ যার ৯.২ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে ছেলে-মেয়ের প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসহ শৈশবের একেবারে গোড়া থেকে মানসম্মত বিকাশ ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা বিধান করা।

বাংলাদেশের জাতীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুণগত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অত্যাবশ্যক। বর্তমান যুগে মানসম্মত শিক্ষা একটি অপরিহার্য চাহিদা। আর বিশেষভাবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটা সময়ের দাবি। মানসম্মত শিক্ষার অপরিহার্য উপাদান হলো আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম, পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য শিক্ষক, প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান সামগ্রী ও ভৌত কাঠামো, যথার্থ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি, কার্যকর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান, উপযুক্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি ও ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ইত্যাদি।

শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হলে শুধু ভালো নম্বর বা গ্রেড পেলে হবে না, পাশাপাশি নৈতিকতা ও আত্মবিশ্বাসের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে মানসম্মত পর্যায়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন ও মানসম্মত করতে বিভিন্ন যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে সর্বজনীন ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে রয়েছে বিভিন্ন বহুমুখী চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের জাতীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুণগত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অত্যাবশ্যক। বর্তমান যুগে মানসম্মত শিক্ষা একটি অপরিহার্য চাহিদা। আর বিশেষভাবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটা সময়ের দাবি। মানসম্মত শিক্ষার অপরিহার্য উপাদান হলো আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম, পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য শিক্ষক, প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান সামগ্রী ও ভৌত কাঠামো, যথার্থ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি, কার্যকর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান, উপযুক্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি ও ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ইত্যাদি।

এ ছাড়া বর্তমান সময়ে সরকার একজন শিক্ষার্থীকে তার শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, গোত্রগত, জাতিগত ও ধর্মীয় পার্থক্য বিবেচনা না করে সামর্থ্য অনুযায়ী বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে; যেখানে সব শিক্ষার্থীই শিখবে, সব শিক্ষার্থীই উপযুক্ত শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে, তাদের প্রয়োজন ও বয়স অনুযায়ী শিক্ষাক্রম পাবে এবং সবাই সহপাঠক্রমিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে। এতে শারীরিক, মানসিক কিংবা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভাও বিকশিত হচ্ছে এবং তারাও বুঝতে পারছে তারা অন্যদের থেকে আলাদা নয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন করে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক মানসম্মত যুগোপযোগী শিক্ষা এবং আধুনিকজ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে দক্ষমানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা, শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্যোগ, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়ন, যথাসময়ে ক্লাসশুরু, নির্দিষ্ট দিনে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, ৬০ দিনে ফলপ্রকাশ, সৃজনশীল পদ্ধতি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, স্বচ্ছ গতিশীল শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আকৃষ্ট করে ঝরে পড়া বন্ধ করা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্কুল ও মাদ্রাসায় সকল ধরনের শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে যথাসময়ে বই পৌঁছে দিয়ে দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। এই অভূতপূর্ব সফলতা সমগ্র জাতির কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্বসমাজে পেয়েছে স্বীকৃতি ও মর্যাদা।

আজকের কোমলমতি শিক্ষার্থীরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে এরাই দেশ পরিচালনা করবে এবং বহির্বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে। কাজেই শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের জন্য সৎ দক্ষ দেশপ্রেমিক ও উদার গুণাবলীসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিশুদের মনে দেশপ্রেম গড়ে তোলার মাধ্যমে মহন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাদের উজ্জীবিত রাখতে আমাদের সবার দায়িত্ব নিতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন, মানসম্মত ও যুগোপযোগী করতে হলে এর বিকেন্দ্রীকরণ এবং সচেতন জনগণের অংশ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য দরকার এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের বেতনকাঠামো আকর্ষণীয় ও সন্তোষজনক করা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের বর্তমান ধারার সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি। আশার কথা হলো, সরকার এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও যথাযথ বাস্তবায়নই আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাকে পৌঁছে দেবে মানসম্মত শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

পরিশেষে বলা যায়, শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। আর শিশুদের ওপরই জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের ভালোবাসতেন এবং শিশুদের উন্নয়নে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় এবং একই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আশানুরূপ ফলও পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিই রচিত হয় প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে যথার্থ শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শিশুদের সার্বিক দিক দিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাতেই এগিয়ে যাবে দেশ, এগিয়ে যাবে আমাদের ভবিষ্যৎ। গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।

লেখক:
মেধু কুমার বড়ুয়া
সহকারি শিক্ষক
উখিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
উখিয়া, কক্সবাজার।

 

 

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব উখিয়া নিউজ- এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য উখিয়া নিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...